সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
সকালের বার্তা ডেস্ক রিপোর্টঃ- টাঙ্গাইলের ভূঞাপুয়ে প্রায় ৬০ লাখ ঘটফুট আস্তর বালু (প্লাস্টার বালা) ২৬ লাখ ঘটফুট ভিটি বালু হিসেবে নিলামে কম মূল্যে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চি হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি পলশিয়া চেয়ারম্যানের ঘাটে অভিযান চালিয়ে বালু জব্দ করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এরপর সেই বালু গত ৭ জানুয়ারি নিলামের মাধ্যমে এক টাকা ৮৫ পয়সা দ্বরে মোট ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় ২৬ লাখ ঘটফুট ভিটি বালুর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জহুরা ইন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ।
টাঙ্গাইল জেলায় একমাত্র উপজেলা যেটি নির্মান বালু বা প্লাস্টার বালুর ঘাট বিক্রির অন্যতম স্থান। এ উপজেলায় প্রায় ১১টি স্পটে এই নির্মান বালু বিক্রি হয়ে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। আর এসব স্পটে সিরাজগঞ্জের শিমলা ও চন্ডাল বয়রা বালু মহাল থেকে ব্যবসায়ীরা বালু কিনে ভূঞাপুরের বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে। এরপর শুরু করেন বালু বিক্রি। সম্প্রতি উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পলশিয়া এলাকা চেয়ারম্যানের ঘাটে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। সেখানে স্তুপ করে রাখা ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি বালু জব্দ করেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। তবে স্থানীয়রা বলছেন সেখানে কোন ভিটি বালু নেই। যা আছে সবই সিরাজগঞ্জ থেকে কিনে আনা আস্তর বালু।
অভিযোগ উঠেছে, জব্দকৃত ২৬ লাখ ঘটফুট বালু কাউকে কিছু না জানিয়েই সহকারি কমিশনার তার নিজের ইচ্ছেমত প্রকার পেপার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নিলাম আহ্বান করেন। এছাড়া কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেউ এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আস্তর বালু এভাবে ভিটি বালু দেখিয়ে নিলামে বিক্রি করে দেওয়ায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ঘাটে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তর বালু রয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা মোঃ লিটনের সাথে যোগসাজস করে উপজেলা সহকারি কশিনার (ভূমি) সেই বালু ভিটি বালু হিসেবে কাউকে কিছু না জানিয়েই লিমামে তোলেন। এরপর জহুরা ইন্টারপ্রাইজকে মাত্র এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে ৬০ লাখ ঘনফুট বালু মাত্র ২৬ লাখ ঘনফুট দেখিয়ে পাইয়ে দেন। এতে তিনি নিয়েছেন বাড়তি সুবিধাও। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে উপজেলা বাসীর মধ্যে। তারা বলছেন, একদিকে বালুর পরিমান কম দেখানো অন্যদিকে আস্তর বালু ভিটি বালু হিসেবে নিলামে বিক্রি। এটা চরম অনিয়ম। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তিনটি স্থানে স্তুপ করে রাখা রয়েছে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তুর বালু। আর এই আস্তর বালু বিক্রি হয় প্রতি সেপ্টি ৬ টাকা দ্বরে। তবে এই আস্তর বালু নিলামে উঠে হয়ে গেছে ভিটি বালু। আর এতে সরকার যেমন কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। তেমনি লাভবান হয়েছেন সর্বোচ্চ দরতাদা এবং উপজেলা সহকারি কমিশনার। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, এই ঘাটে অন্তত ৬০ লাখ ঘটফুট আস্তর বালু বা প্লাস্টার বালু রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর যোগসাজসে একজন সরকারি কর্মকর্তা বালুর পরিমান কম দেখিয়ে এবং আস্তর বালুর পরিবর্তে ভিটি বালু উল্লেখ করে নিলাম করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ তারিকুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে সেখানে থাকা ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি বালু জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে বিক্রি করা হয়েছে। তবে সেখানে কোন আস্তর বালু নেই বলেও উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি জানান, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় এভাবেই নিলাম করা হয়, একারণে তিনিও করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা: পপি খাতুন জানান, জব্দকৃত বালু কিভাবে নিলামে তোলা হয়েছে এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তিনিই ভাল ব্যখ্যা দিতে পারবেন। একারণে তার সাথেই এ বিষয়ে কথা বলেন।
Leave a Reply