সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
সকালের বার্তা ডেস্ক রিপোর্ট :ছেলের কাঁধে বাবার লাশ উঠবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সেই বাবার কাঁধেই যদি একমাত্র ছেলের লাশ বহন করতে হয় তবে সেটা বেদনাদায়ক।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে হতভাগা এক বাবা তার একমাত্র ছেলের লাশ কাঁধেও নিতে পারেনি, রাতের আঁধারে চুপিসারে এসে প্রাণপ্রিয় পুত্রের কবরে মাটি দিলেন বাবা।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি পাভেল রহমান লুকিয়ে তার ছেলের কবরে মাটি দিচ্ছেন। এসময় তাকে সান্তনা দিয়ে তার সঙ্গ দেন নিকরাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে বের হতে পারছেন না। আর সেই ভয়াবহ বাস্তবতায় ঘটেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা।
নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পাভেল রহমান যখন আত্মগোপনে, ঠিক তখনই পাভেলের বুকের ধন, তার একমাত্র ছেলে সাদমান রাফিদ ইফতি না ফেরার দেশে চলে যায়।
২৬ এপ্রিল ভোর ৬.৩০ ঘটিকায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ইফতি।পরিবারে নেমে আসে শোকের কালো ছায়া।
কিন্তু সন্তানের শেষ বিদায়ে থাকতে পারলেন না পিতা। জীবনের ভয়, পুলিশের আতঙ্ক তাকে ঠেলে রাখলো অজানা অন্ধকারের দিকে।
গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকালে গ্রামের কবরস্থানে ইফতির দাফন সম্পন্ন হয়। চারপাশে শোকের নীরবতা, কান্নার শব্দ। অথচ বাবার চোখের জল শুকিয়ে গেছে লুকোনো কোনো ঘরের কোণে। ছেলের লাশ যখন গ্রামের মাটিতে নেমে আসে, তখনো সে অদৃশ্য… নিঃশব্দে কাঁদছিল কোথাও।
রাত গভীর হলে, আকাশে যখন চাঁদের আলো মিশে অশ্রু হয়ে নামে, পাভেল চুপিসারে আসে ছেলের কবরে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিঃশব্দ পায়ে ছুটে আসে সন্তানের শেষ ঠিকানায়।
কবরের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে বাবার হাত — কাঁপা হাতে মাটি দিলো সন্তানের গায়ে।
মাটির গন্ধ আর কান্নার শব্দ মিলেমিশে এক হয়ে যায় রাতের অন্ধকারে। কেউ দেখেনি, কেউ শোনেনি — শুধু বাতাস বুঝেছে, এই পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যথার ভাষা।
পুত্র হারানোর ব্যথা, ছুঁয়ে দেখতে না পারার কান্না আর আত্মগোপনের নিরুপায় বাস্তবতা — ভূঞাপুরের নিকরাইলে ইতিহাস হয়ে থাকবে আজীবন।
Leave a Reply